ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

নানা অনিয়ম সিআইপি’র সিএনজি পাম্পে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি চলছেই

115-278x300তুষার তুহিন, কক্সবাজার ::::
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপি পরিচালিত গ্যাস পাম্পে এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সিএনজি গ্যাস। প্রতি ঘনফুটে বাড়তি আট টাকা করে আদায় করছে সিআইপির মালিকানাধীন জেলার একমাত্র সিএনজি পাম্পটিতে। এছাড়া পাম্পটির বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
গাড়ি মালিকদের অভিযোগ গ্যাসের সাথে বাতাসের সংমিশ্রন ঘটিয়ে গ্যাস সাপ্লাই দিচ্ছে ওই পাম্পটি। এছাড়া স্থানীয় গাড়ি দীর্ঘ লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে পর্যটকদের গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ দেয় ওই প্রতিষ্ঠানটি। সিএনজি চালক ও মালিকরা দাবী করেছেন এত অনিয়ম সামাল দিতে ওই পাম্পের রয়েছে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। গতকাল সোমবার রাতে অবৈধভাবে বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়টি প্রতিবেদকের কাছে স্বীকারও করেছেন সিআইপি সালাউদ্দিন।
২০০৯ সালে হাজী সরওয়ার ফিলিং ষ্টেশন নামে ওই ভ্রাম্যমান সিএনজি ষ্টেশনটি যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকেই প্রতি ঘনফুট গ্যাসে ৮ টাকা করে বাড়তি নেয়া হচ্ছে ওই পাম্পে। এছাড়া বনবিভাগের জমি দখল করে তৈরি করা হয় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এসব তথ্য – উপাত্ত নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল দৈনিক কক্সবাজারসহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় “হাতিয়ে নেওয়া হল সাড়ে ১৭ কোটি টাকা” শিরোনামে একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু তারপরও থামেনি বাড়তি দামে গ্যাস বিক্রি।
ওই প্রতিবেদনের পর শহরের সিএনজি চালিত মাইক্রোবাস, কার ও সিএনজি মালিকের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাদের অভিযোগ ওই প্যাম্পে গ্যাসের সাথে বাতাসের মিশ্রন ঘটানো হয়। সেজন্য এ গ্যাসে প্রেসার কম থাকে। এছাড়া বাতাসের মিশ্রন থাকায় দ্রুত গাড়ি বিকল ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ওই পাম্প থেকে গ্যাস নিয়ে এ পর্যন্ত আড়াই শতাধিক গাড়ি বিকল হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে সিএনজি ট্যাক্সির মালিক মতি সওদাগর জানান, ওই পাম্প থেকে তিনি নিয়মিত তার সিএনজিতে গ্যাস নিতেন। কিন্তু এক বছর গ্যাস নেওয়ার পর নতুন সিএনজিটি বিকল হয়ে যায়। পরবর্তীতে সিএনজি মিস্ত্রী মারফত তিনি জানতে পারেন ওই পাম্পের গ্যাসে বাতাস রয়েছে। এ কারণে গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। বর্তমানে বাধ্য হয়ে তিনি সিএনজি চালাতে পেট্রোল ব্যবহার করেন।
মাইক্রোবাস চালক কবির আহমদ জানান, চট্টগ্রামে গ্যাসের দম কম, বিপরীতে গ্যাসের প্রেসার বেশী। তাই কম গ্যাসে বেশী দুরত্ব অতিক্রম করা যায়। কিন্তু লারপাড়ার সিএনজি পাম্পের গ্যামের দাম বেশী হলেও তার প্রেসার কম। তাই অল্পতেই শেষ হয়ে যায় গ্যাস।
গতকাল বিকালে সরেজমিনে সিএনজি প্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ির লম্বা লাইন। গ্যাস নিয়ে বের হচ্ছেন অনেকে। মূল্য রাখা হচ্ছে প্রতি ঘনফুটের জন্য সাড়ে ৫০ টাকা। পাম্পের পশ্চিমপাশ দিয়ে গ্যাস নিয়ে বের হচ্ছে সিএনজি ও মাইক্রোবাস। কিন্তু মাঝে মধ্যে ওই পথেই ডুকছে মাইক্রোবাস ও কার। এ বিষয়ে ঝাউতলা গাড়ির মাঠের মাইক্রোবাস চালক নুর জানান, পশ্চিম পাশ দিয়ে যেসব গাড়ি প্রবেশ করে সেগুলো ঢাকা চিাটাগাং থেকে আসা গাড়ি। ওদের কাছ থেকে ৬০ টাকা হারে দাম নেয়। এজন্য ওদেরকে আগে সিরিয়াল দেওয়া হয়। আর এ কাজ করার দায়িত্ব পালন করে পূর্ব লালপাড়ার লাল মোহাম্মদ। তারই নেতৃত্বে রয়েছে একটি লাঠিয়াল বাহিনী। কেউ ওই পাম্পে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই ওই লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে শায়েস্তা করা হয়।
এ বিষয়ে সিএনজি চালক আব্দুল খালেক জানান, তাদেরকে মানি রিসিভ দেওয়া হচ্ছে না। যে রিসিভটি দেয় সেটি আবার নিয়ে নেয় দারোয়ান।
এক সময় কথা মাইক্রোবাস চালক কুতুবের সাথে। তার মতে, চট্টগ্রাম শহরের সিএনজি পাম্পে প্রতি ঘনফুটে মূল্য রাখা হয় ৩৫ টাকা। তার বিপরীতে কক্সবাজারের সিএনজি পাম্পটিতে মূল্য নেওয়া হয় সাড়ে ৫০ টাকা। এ কারনে তিনি ওই ফিলিং ষ্টেশন থেকে গ্যাস নেন না। তবে গতকাল জরুরী দরকার হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে সাড়ে ১৮ ঘনফুট গ্যাস নিয়েছেন। যার মূল্য ধরা হয়েছে ৯৪২ টাকা।
এ বিষয়ে হাজী সরওয়ার সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনের ম্যানেজার রমজান জানান, ওই ষ্টেশন থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার ঘনফুট সিএনজি বিক্রি করা হয়। বর্তমানে প্রতি ঘনফুট গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে সাড়ে ৫০ টাকায়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্য কত তিনি জানেননা।
এদিকে গতকাল রাতে বাড়তি দামের বিষয়ে মুখ খুলেন সিআইপি সালাউদ্দিন। তিনি স্বীকার করলেন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা আদায়ের কথা। এ বিষয়ে তিনি জানান, গ্যাসের ক্ষেত্রে কিছু পরিবহনে নষ্ট হয়, যাতায়াত ভাড়া অনেক সময় বেশী যায়। এছাড়া আরো অন্যান্য খরচের কারণে ওই বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে।
তবে চট্টগ্রাম পেট্রোলিয়াম করপোরেশন  সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলার একমাত্র ফিলিং ষ্টেশনটি মাদার ডটার ফিলিং ষ্টেশন অর্থাৎ ভ্রাম্যমান ফিলিং ষ্টেশন। এ কারণে যাতায়াত খরচ বাবদ তাদেরকে চট্টগ্রামের বিক্রয় মূল্যের চেয়ে ৭ টাকা বাড়তি দামে বিক্রয় করার সুযোগ দেওয়া হয়। সেই মতে বর্তমানে চট্্রগ্রামে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম ৩৫ টাকা। তাহলেও ওই ফিলিং ষ্টেশনে গ্যাসের দাম হয় ৪২ টাকার বেশি নেওয়ার কথা নয়। কিন্তু সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বিক্রি করা হচ্ছে সাড়ে ৫০ টাকায়।
এই বিষয়ে সিআইপি সালাউদ্দিন জানান, সাত টাকা বাড়তিতে তার পোষায় না। এজন্য খরচ সামাল দিতে আরো বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: